৳ ১৮০ ৳ ১৩৫
|
২৫% ছাড়
|
Quantity |
|
৯৯০ বা তার বেশি টাকার বই অর্ডারে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। কুপন: FREEDELIVERY
প্রথম অর্ডারে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ছাড়; ১০০০+ টাকার বই অর্ডারে। ৫০ টাকা ছাড়; ৫০০+ টাকার বই অর্ডারে। কুপন: FIRSTORDER
একাডেমিক বইয়ে প্রতি ১০০০ টাকার অর্ডারে একটি করে খাতা ফ্রি ও ডেলিভারি ফ্রি
তৃতীয় ঘরটাও ভেঙে যাওয়ার পর যখন চতুর্থবারের মতো ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে শাহানারা, তখনই মিরন উপলব্ধি করে—তার মায়ের কাছে ‘সন্তান’ অপেক্ষা ‘স্বামী’ শব্দটা অনেক বেশি দামী। জীবনভর বিধাতাও তাকে নিয়ে করেছে সূক্ষ্ম-উপহাস। প্রবল মেধাশক্তি দিয়ে প্রয়োগের সুযোগ দেননি। ফলে, চা-স্টলের সামান্য বেতনের কর্মচারী থেকে পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে রিক্সাচালক, তারপর ইজিবাইকের ড্রাইভারের ফ্রেমে আটকে থাকে তার জীবন। আমি যে শহরের সরকারি চাকুরে, মিরন সে শহরের ইজি-চালক। পাঠশালায় আমার চেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া সেই ছাত্রটি জীবনশালায় এসে আমার চেয়ে যে কয়েক গুণ কম নম্বর পেয়েছে সেটা আর নতুন করে বলার দরকার হয় না। এখানেও সে আমার চেয়ে অধিক নম্বর পেতে পারতো। পায়নি। মায়ের বিবাহবিলাসিতা, পরপুরুষের বাতিক এবং দারিদ্র্য—সে পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই। মিরন হেরে যায়নি। তাকে হারানো হয়েছে। পরিবারের উদাসীনতা, অপর্যাপ্ত স্নেহ-শাসন, মায়ের নব্যপতিদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, সর্বোপরি অর্থকষ্ট মিরনকে শিক্ষা-দীক্ষার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই উচ্চমার্গীয় কোনো গ্রন্থ-শাস্ত্রের স্পর্শ না পেলেও, সহজাত-প্রবৃত্তি তাকে জানিয়ে দিয়েছে—‘অবশেষে মানুষ একা/মানুষ তার চিকুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা’ বংশ-পরম্পরায় নয়, মায়ের বিবাহসূত্রে জীবনের বেশির ভাগ সময় তাকে কাটাতে হয়েছে পাহাড়ি অঞ্চল চট্টগ্রামে। জীবনে অনেক উঁচু-উঁচু পাহাড়-পর্বত দেখেছে সে, আজ অব্দি মনের মানুষ দেখেছে কিনা জানি না। সুতরাং, পাহাড়ের সাথে বসবাস করতে করতে আত্মনির্ভরতার দাওয়াইটুকু ভালোই রপ্ত করেছে সে, হয়তো করতে বাধ্য হয়েছে। কর্মব্যস্ততা এবং লড়াই-সংগ্রাম ছাড়া আর যে কোনো ধর্ম নেই তার। অল্প বয়সে খেলার মাঠ ছেড়ে মায়ের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেন ধরেছিলো সেই যে কত আগে। আমরা যারা শৈশববন্ধু, তার জন্যে ব্যথিত হতাম, মন খারাপ করতাম। কিন্তু কোনোদিন উপকারে আসতে পারিনি। কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে একটু আরাম-আয়েশে দিনযাপনের জন্যে প্রায়ই সে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে আসতো। গ্রামে তার চাচা-চাচিরা থাকে, ফুফু-খালারাও থাকে। কিন্তু পিতৃহীন, জীবন্মৃত মায়ের এ-সন্তানটি যেন সবার সামনে ওলা-ওঠা অথবা করোনা ভাইরাসের মতোই ভয়ংকর মহামারির রূপ নিয়ে হাজির হতো। তার গ্রামে ফেরাটা আমাদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও আত্মীয়-স্বজনের কাছে তা ছিলো একেবারেই গুরুত্বহীন, বিরক্তিকর। স্বজনদের অবজ্ঞা-অবহেলা, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপের মুখে পড়ে, ষ-া-ছেলে উপাধি নিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে নিভৃতে একদিন চট্টগ্রামের পথ ধরতো। আমরাও তাতে আহত হতাম কিন্তু করতে পারতাম না কিছু; শুধু তার প্রত্যার্বতনের আশায় পথ চেয়ে থাকতাম। কদিন না যেতেই সেটাও ভুলে যেতাম। প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর রং বদলায়, বদলে যায় মানুষ, অদল-বদল হয় মন ও স্নেহ-ভালোবাসা কিন্তু একজন মিরনের ভাগ্যের চাকা আটকা পড়ে থাকে জগদ্দল পাথরের সঙ্গে, এ চাকা ঘোরার শক্তি পায় না। যে আমি ছেলেবেলায় মিরনের দুঃখ-দুর্দশা দেখে অনেক মায়াকান্না দেখিয়েছি, সে আমিও একদিন নিজের স্বার্থটুকু খুঁজে নিতে কুণ্ঠিত হইনি। জীবনের এতোটা বছর পেছনে ফেলে, কর্মজীবনে ঢোকার পর ভুলে গেছি উদ্বাস্তু এক বাল্যসঙ্গীর কথা; ছেঁটে ফেলে দিয়েছি অতীতের ডালপালা! একদা, লাটিম ঘোরানো এবং ডাঙ্গুলি খেলার ওস্তাদ মিরন নামের টগবগে কিশোর চট্ট্রগাম থেকে এলাকায় ফিরলে আমরা উল্লাসে ফেটে পড়তাম। ভাবতাম, নতুন কোনো খেলা নিয়ে অথবা মজার কোনো গল্প আমদানি করে তবেই এলাকায় ঢুকেছে সে। কখনো তার পোশাক-আশাকের দিকে নজর করতাম না। খেয়েছে কিনা সেটাও খেয়াল করতাম না। অবশ্য অতটা বোঝার বয়সও তখন ছিলো না আমাদের। সেই মিরনই একদিন ময়লাযুক্ত কাপড় শরীরে জড়িয়ে, সাধারণ স্যান্ডেল ও লুঙ্গী পরে আমার অফিসে এসেছিলো, তাকে দেখে পাঙ্চার হওয়া চাকার মতো নিজেকে কেমন গুঁটিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। এ তো এক দুর্গন্ধময় আবর্জনা, আনস্মার্ট ক্ষেত। যতো তাড়াতাড়ি এ জঞ্জাল অপসারণ করা যায় ততোই ভালো। থাকলে কেবল গন্ধ ছড়াবে, ব্যক্তিত্ব নিয়ে টান দেবে। তাই কাজের ব্যস্ততা বাড়িয়ে দিলাম। নানান-রকম হতাশাব্যঞ্জক অঙ্গভঙ্গি করে ‘এটা পাইনি, ওটা হারিয়েছি’—এমন তালবাহানা জুড়ে বসলাম। নিজের মধ্যে কৃত্রিম একটা অস্থিরতাও সৃষ্টি করলাম। সবই ছিলো মিরন চলে যাওয়ার ব্যাপারে শুভবুদ্ধি উদয় করার ফঁন্দি। হ্যাঁ, মিরনের সুবুদ্ধি উদয় হলো। সে চলে গেলো। রেখে গেলো একগুচ্ছ শব্দমালা, যা আমার কানের মধ্যে বজ্রাঘাত করেছে, ভাবনার গোলকে লাত্থি মেরেছে। লজ্জা-কাতর মিরন দুই-হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বলেছিলো—‘জিশান, একটু বেকাদায় পইড়া তোর ধারে আইছিলাম। অনেক টোগাইয়া তোর ঠিকানা পাইলাম। গেরাম থেইক্যা আইজগাই ফিরলাম। চিটাগাং ভাল্লাগে না আর। গেরামেও কয়দিন থাইক্যা টেকা-পয়সা সব খোয়াইয়া আইছি। তাই এই টাওনেই ফিরতে অইলো। মালিকের লগে কতা কইছি। কইলো, আইজ আর গাড়ি পামু না, কাইল বিহানে যেমুন যোগাযোগ করি। শুধু ভাড়ার টেকা লইয়া আইছিতো, খাওনের খরচ নাই। চিন্তা করলাম, তুই যকন এই টাওনে আছত তাইলে আর টেনশন কইরা লাভ কী। তোর ধারে তো একদিন থাকতামই পারি। তাই না। তুই তো…’ কথা শেষ করতে না দিয়ে নিজের অভাব-অনটনের ফিরিস্তি ও সাংসারিক জটিলতার বয়ান টানা শুরু করলাম। অফিসিয়াল একটিভিটিজ বাড়িয়ে দিয়ে তাকে এড়িয়ে চললাম এবং চলে যেতে উৎসাহিত করলাম। অফিসে সবচেয়ে বড় ফাঁকিবাজ থেকে হঠাৎ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠলাম। দশ কথার জবাবে যখন একটা উত্তরও না মেলে, তখন তারই বা করার কী থাকে! আমাদের সামনে দাঁড়ানোর জন্যে কী যোগ্যতা লাগে এই গ্রাম্য খেঁকশিয়ালের মাথায় কি তা আছে? আবার ‘তুই-তাই’ করেও সম্বোধন করে! রাবিশ!
Title | : | চৈতি রাতের কাশফুল |
Author | : | রফিকুজ্জামান রণি |
Publisher | : | অনুপ্রাণন প্রকাশন |
ISBN | : | 9789849511779 |
Edition | : | 1st Published, 2020 |
Number of Pages | : | 80 |
Country | : | Bangladesh |
Language | : | Bengali |
অ্যাডভোকেট রফিকুজ্জামান রণি। দাপ্তরিক নাম- মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, পিতা- মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খোকা, মাতা- লাভলী জামান। জন্ম ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৯২; চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায়, দোঘর গ্রামে। চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে কুমিল্লা বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজ থেকে আইন বিষয়ক ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। পেশায় আইনজীবী। পেয়েছেন জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার- ২০১৯; চাঁদপুর জেলা প্রশাসক পাণ্ডুলিপি পুরস্কার- ২০১৮; দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার- ২০১৮; ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড- ২০২০; ‘এবং মানুষ’ তরুণ লেখক পুরস্কার- ২০১৯; পেন বাংলাদেশ সাহিত্য পুরস্কার- ২০২১; নাগরিক বার্তা লেখক সম্মাননা- ২০১৯; চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার- ২০১৪; জাতীয় সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা- ২০১৪; মুন্সিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ সম্মননা- ২০২২; নতুন এক মাত্রা তরুণ লেখক পুরস্কার ২০২৩; ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম সাহিত্য পদক- ২০১৩। প্রকাশিত গ্রন্থ ৬টি: দুই শহরের জানালা (গল্প); ধোঁয়াশার তামাটে রঙ (কবিতা); চৈতি রাতের কাশফুল (গল্প); মুঠো জীবনের কেরায়া (কবিতা), অতল জলের গাঁও (কবিতা) ও স্মৃতির ছায়াশিস (গল্প)। ২০২২ এর শেষ ভাগে তিনি কবি আইরিন সুলতানা লিমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
If you found any incorrect information please report us